প্রতিবেদক, রামু
জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ। দ্রুত রোগ নির্ণয় ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ থেকে সম্পূর্ণ সেরে ওঠা সম্ভব। এটি নারীদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। নিয়মিত পরীক্ষা ও এইচপিভি (হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস) টিকাদানের মাধ্যমে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং এই ক্যান্সারজনিত মৃত্যু হ্রাস করা সম্ভব। রামুতে মাসব্যাপী টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত স্কুল, মাদ্রাসার ছাত্রী এবং ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বহির্ভূত ২৩ হাজার ১৬৭ জন কিশোরীকে এইচপিভি টিকা দেয়া হবে।বুধবার (২৩ অক্টোবর) সকাল ১০টায় রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত অবহিতকরণ সভায় এ তথ্য জানানো হয়। জাতীয় এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইন উপলক্ষে আয়োজিত অবহিতকরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাজ্জাদ জাহিদ রাতুল। রামু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া এ অবহিতকরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন।
প্রধান অতিথি সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাজ্জাদ জাহিদ রাতুল বলেন, সুস্থ মা না হলে, সুস্থ শিশুর জন্ম হবে না। বিশ্বে নারী মৃত্যুর ঝুঁকিতে বাংলাদেশ সবার উপরে। তাই সচেতনভাবে নারী মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে হবে। কৈশোরকালীন স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দিগন্ত হচ্ছে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধী এইচপিভি টিকা। সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই, যৌন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জনপ্রতিনিধিদের সমৃক্ত করতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের সহযোগিতা প্রয়োজন।সূচনা বক্তব্যে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া বলেন, প্রতিবছর বিশ্বে ছয় লক্ষাধিক নারী জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে প্রায় তিন লক্ষ মৃত্যুবরণ করেন। এর প্রায় ৯০ শতাংশ মৃত্যুই বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে ঘটে থাকে। অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্তের হার বেড়েই চলছে। জরায়ুমুখ ক্যান্সারের চিকিৎসাও অত্যন্ত ব্যয় বহুল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে এই ক্যান্সারে সব চেয়ে বেশি নারী প্রাণ হারান। প্রতি এক লক্ষ নারীর মধ্যে ১১জন জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং প্রতিবছর প্রায় পাঁচ হাজার জন নারী মৃত্যুবরণ করেন।
ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া আরও বলেন, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) একটি যৌনবাহিত ভাইরাস। এটি জননাঙ্গে আঁচিল ও জরায়ুমুখ ক্যান্সার সৃষ্টি করে থাকে। বাল্যবিবাহ ও অনিরাপদ শারীরিক মিলনের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এইচপিভি ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ সঙ্গে সঙ্গে বোঝা যায় না। সাধারণ এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হওয়া থেকে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের লক্ষণ প্রকাশ পেতে ১৫-২০ বছর সময় লাগে। তবে স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন নারীদের ক্ষেত্রে ক্যান্সারে রূপ নিতে মাত্র ৫-১০ বছর সময় লাগে। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত এবং দেহরসে এই ভাইরাস পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কোন কিশোরী যেন এ টিকা পাওয়া থেকে বাদ না পড়ে, সে বিষয়ে বিশেষ নজর রাখা হবে। ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সমূহে ব্যাপক প্রচার- প্রচারণা চালানো হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, ইমাম, পুরোহিত সহ ধর্মীয় নেতা, সাংবাদিক এবং অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগের মাধ্যমে টিকাদানের তথ্য আদানপ্রদান এবং সকলের সহযোগিতায় এ ক্যাম্পেইন বাস্তবায়ন করা হবে।
সভায় হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকাদান ক্যাম্পেইনের মূল প্রতিপাদ্য উপস্থাপন করেন, উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক দর্পন বড়ুয়া ও ইপিআই টেকনিশিয়ান আলী আকবর। সভায় আরও জানানো হয়, ‘এক ডোজ এইচপিভিটিকা নিন, জরায়ু মুখ ক্যান্সার রুখে দিন” এ স্লোগানে সারাদেশের ন্যায় রামু উপজেলার এগার ইউনিয়নে ২৪ অক্টোবর থেকে মাসব্যাপী নির্ধারিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও টিকাদান কেন্দ্রে পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছাত্রী এবং ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত কিশোরীদের বিনামূল্যে ব্যয়বহুল এইচপিভি টিকা প্রদান করা হবে। শুধুমাত্র অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে এ টিকা প্রদান করা হবে। রেজিস্ট্রেশন করার পর অবশ্যই ডাউনলোডকৃত টিকা কার্ডটির প্রিন্ট কপি সাথে আনতে হবে। ১৭ ডিজিটের জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে। জন্মনিবন্ধন বিহীন কিশোরীদের হোয়াইট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে ক্যাম্পেইন আওতাভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র সমূহে এইচপিভি টিকা দেয়া হবে।
সভায় উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা জুলফিকার আলী, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম, উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবু শামীম, মেডিকেল অফিসার ডা. মামুন, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক খালেদ শহীদ, রামু প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক সোয়েব সাঈদ, রামু খিজারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাজনিন আকতার মেরি, মেরংলোয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন রামু উপজেলা সুপারভাইজার মো. সাইফুদ্দিন খালেদ বক্তব্য রাখেন। এ সময় রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, শিক্ষক, সাংবাদিক, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য সহকারীসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
পাঠকের মতামত